এ রাজ্যেরই এই গ্রামে ঘরে ঘরে তৈরি হয় পরচুলা, কোথায় জানেন?

বাড়িতে তৈরি হচ্ছে পরচুলা। - নিজস্ব চিত্র
নিজস্ব প্রতিবেদন: টাক ঢাকতে হোক বা সৌন্দর্য বাড়াতে, পরচুলার জুড়ি মেলা ভার। বিশ্বের সিংহভাগ পরচুলা কোথায় তৈরি হয় জানেন? তৈরি হয় এই বঙ্গেই। গোটা গ্রামে ঘরে ঘরে পরচুলা তৈরির কারবার। কলকাতা লাগোয়া হাওড়া জেলায়। কলকাতা থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে সেই বাণীবন জগদীশপুর গ্রাম বা পরচুলা গ্রামেই ঢুঁ মারল সুবর্ণরেখা ডট কম। 

চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে নানা ধরনের ঘরোয়া টোটকার প্রচলন চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। সময় বদলেছে। পাল্টেছে মানুষের জীবনযাত্রাও। ব্যস্ততার কারণে ঘরোয়া টোটকার সামগ্রী জোগাড় করা অনেক ক্ষেত্রেই অসম্ভব হয়ে যায়। তাই বলে কি সাধের চুলের যত্ন হবে না? তাও কি হয়? বাজার চলতি বিউটি প্রোডাক্ট নিমেষে মিটিয়ে দিয়েছে সেই সমস্যা। 

কিন্তু এই সব বিউটি প্রোডাক্টের রয়েছে নানা সমস্যা, বহু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। কারও অতিরিক্ত ক্যামিক্যালের জন্য চুল পড়ে টাক হয়ে যাচ্ছে, কারও আবার টাকার অভাবে প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠছে নিয়মিত বাজার চলতি বিউটি প্রোডাক্টগুলি ব্যবহার করা। তাহলে উপায়? এই সমস্যার সহজ সমাধান হল উইগ বা পরচুলা। এটি যেমন টাক ঢাকতেও সাহায্য করবে, তেমনই কেউ যদি নিত্যনতুন লুক বদলাতে চান, তাও সম্ভব হবে সহজেই। তাই অভিনেতা থেকে সাধারণ মানুষ- সকলেরই স্টাইল স্টেটমেন্ট হয়ে উঠেছে এই উইগ বা পরচুলা। শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও বেড়েছে পরচুলার চাহিদা। নানা ছাঁটের উইগ এখন স্টাইল-ইন।

সারা বিশ্বে পরচুলার একটা বড় অংশের জোগান দেয় ভারত। এবং সেটাও সম্ভব হয়েছে এই বাণীবন জগদীশপুর গ্রামের কল্যাণে। সারা দেশে মোট যা পরচুলা তৈরি হয়, শুধু এই গ্রামেই তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি পরচুলা তৈরি হয় এই বাণীবন জগদীশপুর গ্রামে। 

গ্রামের প্রায় প্রতিটি গলিতে রয়েছে একটি করে পরচুলা বানানোর কারখানা। প্রতি বাড়িতে কারিগর। ঘরোয়া ব্যবসা প্রায় সবার। মহিলা-পুরুষ থেকে পড়ুয়ারা পর্যন্ত এই পরচুলা তৈরি করতে পারেন। নিত্য দিনের কাজের ফাঁকে ফাঁকেই সমান তালে তৈরি করতে থাকেন নানা ধরণের উইগ, খোঁপা, বেণী ইত্যাদি। প্রতিদিন এঁরা আসল চুলকে রূপান্তরিত করছেন নকল চুলে। 

বাণীবন জগদীশপুর গ্রামের একটি চুল কারখানার এক কর্মী জানান, প্রতিদিন দক্ষিণ ভারত ও হাওড়ার একটি মন্দির থেকে আসল চুল আসে। পাশাপাশি কলকাতার বিভিন্ন বিউটি পার্লার ও সেলুন থেকেও আসে নানা সাইজের চুল। সেই চুল ভাল করে ধুয়ে, কেটে বিভিন্ন ধরণের উইগ বোনার কাজ করেন তাঁরা। শুধু চুলই নয়, গোঁফ, দাড়ি এবং ভুরুও বানানো হয় বলে জানিয়েছেন তিনি। 

কিন্তু এত চুল আসে কোথা থেকে? নানা বিশ্বাসে ও মনোস্কামনা পূর্ণ হওয়ার উদ্দেশে ঈশ্বরের কাছে চুল নিবেদন করেন লাখ লাখ মানুষ। সেই চুল পরচুলার কাঁচামালের জোগানের সবচেয়ে বড় উৎস। জেনে আশ্চর্য হবেন যে, সাধারণ ভক্তদেকর দান করা চুল থেকেই প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা রোজগার হয় তিরুপতি মন্দিরের। এছাড়া সেলুনে, পার্লারে চুল কাটলে সেই চুলও কিন্তু নানা হাত ঘুরে পৌঁছে যায় এই পরচুলা তৈরির কারখানায় বা বাড়িতে।

বিশ্বে পরচুলার চাহিদা যত বাড়ছে, কাজের সুযোগ বাড়ছে হাওড়ার এই ছোট্ট গ্রামটিতে। গ্রামের গৃহবধু থেকে তরুণ তরুণী প্রায় সকলেই আর্থিক দিক থেকে নিজেদের শক্তিশালী করতে সক্ষম হয়েছেন। পরচুলার ব্যবসা বাড়তে থাকায় বাণীবন জগদীশপুরের আশপাশের গ্রামগুলিতেও ছড়িয়ে পড়ছে এই শিল্প।  ২০২১ সালে গোটা বিশ্বে প্রায় ৫৮০ কোটি ডলারের পরচুলার ব্যবসা হয়েছিল। এবছর ব্যবসা আরও অনেকগুণ বাড়বে বলে মনে করছেন পরচুলা কারখানার মালিকরা।