আমেরিকার আকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে রহস্যময় চিনা বেলুন! কী আছে ভিতরে?

এই বেলুনই ভেসে বেড়াচ্ছে আমেরিকার আকাশে। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া

সংবাদ সংস্থা, ওয়াশিংটন: মার্কিন আকাশে চিনের রহস্যময় বেলুন (Chinese Spy Balloon)। কী রয়েছে ওই বিশালাকার বেলুনে? কোনও মারণাস্ত্র, নজরদারি, নাকি অন্য কোনও কিছু? ভুল করে পৌঁছেছে, নাকি ইচ্ছাকৃত পাঠানো হয়েছে? এই সব প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে আমেরিকার আকাশে। আর সেই বেলুন রহস্যে ওয়াশিংটন বেজিং কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে। দু’দিনের চিন সফর বাতিল করে দিয়েছেন মার্কিন বিদেশসচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। কড়া ভাষায় শি জিনপিং সরকারকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, এই ঘটনায় চরম ক্ষুব্ধ পেন্টাগন। মার্কিন আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে আমেরিকা। অভিযোগ উঠেছে নজরদারিরও।   পাল্টা দু:খপ্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে বেজিং। 

গত কয়েকদিন ধরে আমেরিকার আকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে বিশালাকার একটি বেলুন। বৃহস্পতিবার প্রথম মার্কিন আকাশে দেখা যায় প্রায় ৩-৪টি বাসের আয়তনের সমান এই বেলুনটি। বাণিজ্যিক উড়ান যে উচ্চতায় ওড়ে, তার অনেক উপর দিয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে বেলুনটি। ভূপৃষ্ঠের প্রায় ১৯ কিলোমিটার উপর দিয়ে উড়ছে বেলুনটি। পেন্টাগনের আধিকারিকদের একাংশ মনে করছেন, বেলুনটি নজরদারির জন্যই পাঠানো হয়েছে। কারণ তার মধ্যে সেন্সরের উপস্থিতি বুঝতে পেরেছেন আমেরিকার নজরদারি চালানো সংস্থা। 

সাধারণত নজরদার বেলুন ভূপষ্ঠের ২৪ থেকে ৩৭ কিলোমিটার উপর দিয়ে ওড়ে। যুদ্ধবিমান ওড়ে মাটি থতেকে ২০ কিলোমিটার উপর দিয়ে। আর বাণিজ্যিক বিমান ওড়ে ১২ থেকে ২০ কিলোমিটার উপর দিয়ে। আমেরিকার আকাশসীমায় ঢোকার আগে এই বেলুনটি আলাস্কা এবং কানাডার আকাশে ভাসতে দেখা যায়। তার পর আমেরিকার মনটানার আকাশে ঢুকে পড়ে। এই মানটানায় রয়েছে প্রচুর পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র কেন্দ্র। স্বাভাবিকভাবেই প্রচণ্ড উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে মার্কিন প্রশাসনে। পুরো বিষয় খতিয়ে দেখার পর প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হোয়াইট হাউস।

তবে হোয়াইট হাইস বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, আকাশে ওই বেলুন ধ্বংস করা সম্ভব নয়। কারণ এত বড় বেলুনের মধ্যে কী রয়েছে, তা জানা বা বোঝা সম্ভব নয়। ফলে আকাশে গুলি করে নামালে বেলুনের ধ্বংসাবশেষ মাটিতে পড়ে ক্ষতি হতে পারে, এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তবে বেলুনের উপর কড়া নজরদারি রয়েছে। আকাশে বেলুনের কাছাকাছি যুদ্ধবিমান উড়িয়ে, ভূপৃষ্ঠ থেকে এবং স্যাটেলাইটের মাধ্যমে নজরদারি চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এর জেরে মার্কিন নাগরিকদের কোনও ক্ষতি হবে না বলেও বিবৃতিতে আশ্বস্ত করা হয়েছে।

শনিবারই বেজিং সফরে যাওয়ার কথা ছিল মার্কিন বিদেশসচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতেই জানিয়ে দেওয়া হয় বেলুনকাণ্ডের জেরে ব্লিঙ্কেনের সফর বাতিল করা হয়েছে। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পরবর্তী সফরের দিনক্ষণ নির্ধারিত হবে। 

এখানেই শেষ নয়, কড়া বিবৃতি দিয়ে হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব জানিয়েছেন, ঘটনায় প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ বিদেশ সচিব। তিনি চিনকে বলেছেন, এই ঘটনা আমেরিকার সার্বভৌমত্ব ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন। এটা অত্যন্ত কাণ্ডজ্ঞানহীনের মতো কাজ। এটা কাঙ্খিত নয়। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর যখন কোনও মার্কিন সরকারের প্রতিনিধি চিনে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন, তার আগে এই ধরনের ঘটনা একেবারেই কাম্য নয়। স্পষ্টতই এটা মার্কিন আকাশসীমা লঙ্ঘনের মতো অপরাধ। 

যদিও শুক্রবার চিনের বিদেশমন্ত্রক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, বেজিং কখনও কোনও সার্বভৌম দেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেনি। কিন্তু তাতেও মন গলেনি ওয়াশিংটনের। শনিবার আরও সুর নরম করে দু:খপ্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে বেজিং। আগেই চিনের তরফে বলা হয়েছিল, আবহাওয়ার তথ্য সংগ্রহের জন্য পাঠানো বেলুন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ভুল পথে আমেরিকার আকাশে চলে যায়। তার জেরেই এই বিপত্তি। শনিবারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই ঘটনার জন্য চিন দু:খপ্রকাশ করছে। আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ পথেই এই সঙ্কটের সমাধান সম্ভব। 

কোভিডের প্রথম ঢেউয়ের সময় শেষ বার কোনও মার্কিন কূটনৈতিক চিন সফরে গিয়েছিলেন। সেই সময় আমেরিকার প্রতিনিধিদের সফরের অনুমতি দেয়নি চিন। কিন্তু বেজিংয়ের অনুমোদনের পরোয়া না করে কোভিড পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে যান মার্কিন প্রতিনিধিরা। তা নিয়ে চিনের সঙ্গে আমেরিকার কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকে। তার পর ব্লিঙ্কেনের সফরে সেই সম্পর্কের বরফ গলবে বলবে যখন কিছুটা আশা দেখছিল দু’দেশের কূটনৈতিক মহল, তখন বেলুন বিভ্রাটে দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও তলানিতে পৌঁছে গেল।