অ্যালার্জি ঝেড়ে ফেলে কংগ্রেসের হাত ধরতেই কি প্রস্তুত তৃণমূল?

বিরোধী ঐক্যে নিয়ে কংগ্রেস ((Indian National Congress) প্রশ্নে কি নমনীয়তার বার্তা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)? 

নিজস্ব প্রতিবেদন: কংগ্রেস (Indian National Congress) অ্যালার্জি কি কমছে তৃণমূলের? বিরোধী ঐক্যের (Opposition Alliance)  প্রশ্নে এবার আরও খানিকটা নমনীয় সুর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) গলায়। কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে রাজি।  কিন্তু কংগ্রেসকেও আঞ্চলিক দলগুলিকে গুরুত্ব দিতে হবে- এ ভাবেই নতুন করে কংগ্রেসকে জোটের বার্তা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধুই কি কর্নাটকে কংগ্রেসের জয়ের জন্য, নাকি নেপথ্যে আরও কারণ রয়েছে তৃণমূল নেত্রীর এই অবস্থান বদলের?  

সোমবার নবান্নে মমতা বলেন, ‘‘যেখানে কংগ্রেস শক্তিশালী, সেখানে ওদের সমর্থন করব। কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু ওদেরও অন্য দলকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।’’ কর্নাটকে ভোটের ফলের প্রসঙ্গ টেনে মমতার খোঁচা, ‘‘আমরা কর্নাটকে সমর্থন করব, আর আপনারা এখানে আমাদের সঙ্গে লড়াই করবেন, এটা তো ঠিক নীতি নয়।’’ অর্থাৎ ঘুরিয়ে এ রাজ্যে কংগ্রেস যাতে বিরোধিতা না করে সেই বার্তা দিতে চেয়েছেন মমতা। কিন্তু অধীরের নেতৃত্বে যিনি মমতা এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে সব সময় খড়্গহস্ত, তিনি কি এটা মেনে নেবেন? নিশ্চয়ই নয়। 

দিল্লির মসনদ থেকে মোদী সরকারকে গদিচ্যূত করতে বিরোধী ঐক্যের কম চেষ্টা হয়নি। মাঝেমধ্যেই অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ব্রিগেডে সব বিরোধী দলকে নিয়ে একুশ জুলাইয়ের মঞ্চে খাড়া করা থেকে দিল্লিতে গিয়ে একাধিকবার বিরোধীদের সঙ্গে বৈঠক, কম চেষ্টা হয়নি। কিন্তু বিরোধী জোটের নেতৃত্বের প্রশ্নে বরাবরই সংঘাতের পথে কংগ্রেস এবং তৃণমূল। মমতাই নেতৃত্ব দেবেন, এমন ভাবনা উস্কে দেওয়া হয়েছে তৃণমূলের তরফে। কিন্তু প্রতিবারই সেই ঐক্যের ভাবনা জল্পনার স্তরেই থেকে গিয়েছে। 

এ কথা ঠিক যে, মোদী মন্তব্যের জেরে রাহুল গান্ধীর দু’বছরের সাজা ঘোষণার পর পরিস্থিতি খানিকটা পাল্টেছে। কিন্তু তাতেও বরফ পুরোপুরি গলেছে এমন নয়। কারণ, এই ঘটনায় তৃণমূল যতটা না রাহুলের শাস্তি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, তার চেয়েও বেশি সরব হয়েছে বিজেপির আগ্রাসী মনোভাবের বিরুদ্ধে, এজেন্সির অপব্যবহারের অভিযোগে। তার সঙ্গে এ বার যোগ হয়েছে কর্নাটকের ভোটের ফল। রাজ্যে একুশের বিধানসভা ভোটের পর থেকে তৃণমূল বলে আসছে, একমাত্র তারাই পারে বিজেপিকে হারাতে। কংগ্রেসের সেই ক্ষমতা নেই। কিন্তু কর্নাটক ভোটের পর সে কথাও আর কার্যত বলার উপায় নেই। তবে উল্লেখযোগ্য ভাবে এই জয়েও সেই একই অবস্থান তৃণমূলের। কংগ্রেসের জয়ের প্রশংসা নয়, বেশি করে তুলে ধরছে বিজেপির পরাজয়কে। রাহুল গান্ধীর জয় নয়, বড় করে দেখানোর চেষ্টা চলছে নরেন্দ্র মোদীর হারকে। এমনকি, মমতা বা অভিষেক কারও কথাতেই কংগ্রেস বা রাহুলের কথা শোনা যায়নি। বরং বিজেপি দক্ষিণ ভারত থেকে মুছে গিয়েছে, এই তত্ত্ব জোরালো ভাবে প্রচার চালাচ্ছে তৃণমূল। 

চব্বিশের লোকসভা ভোটের আগে রয়েছে তিন গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যের বিধানসভা ভোট। মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিসগড় এবং রাজস্থান। এর মধ্যে রাজস্থান এবং ছত্তিসগঢ়ে কংগ্রেসের সরকার। মধ্যপ্রদেশে বিজেপি। এই তিন রাজ্যের ভোটে যদি কংগ্রেস ভাল ফল করে, তখন পরিস্থিতি আরও পাল্টাবে। কংগ্রেস যেমন জোটের নেতৃত্বের দাবিদার হবে, তৃণমূলকেও কংগ্রেসের নেতৃত্বে জোটে যাওয়ার প্রশ্নে আরও নমনীয় হতে হবে। 

আবার চব্বিশের লোকসভা ভোটের আগে এ রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোটও তৃণমূলের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ কথা ঠিক, পঞ্চায়েত আর বিধানসভার ভোট এক সমীকরণে হয় না। মানুষও এক রকম ভাবনা থেকে ভোট দেন না। তবু কর্নাটকের ভোট দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে ঘাসফুল শিবিরের। কারণ কর্নাটকের ভোটের অন্যতম ইস্যু ছিল দুর্নীতি। বিজেপির বাসবরাজ বোম্মাইয়ের জমানায় সরকারি কাজে ৪০ শতাংশ কমিশনের যে অভিযোগ উঠেছিল, সেই দুর্নীতির ইস্যুকেই সবচেয়ে বড় হাতিয়ার করে জোর প্রচার চালিয়েছে কংগ্রেস। তাতে বিপুল সাড়া এবং ভোটের ফল হাতে হাতে মিলেছে। 

পশ্চিমবঙ্গেও অন্যতম ইস্যু দুর্নীতি। স্কুল, পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতির যে প্যান্ডোরার বাক্স খুলে গিয়েছে, তা সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ঘাসফুল শিবিরকে। পাশাপাশি পঞ্চায়েতে পঞ্চায়েতে একশো দিনের কাজ, আবাস দুর্নীতির অভিযোগে জেরবার রাজ্যের শাসক দল। পঞ্চায়েত ভোটে অশনি সঙ্কেত দেখছে মমতার দল। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েতের ফল ভাল না হলে ভবিষ্যতে যে কংগ্রেসের নেতৃত্ব মানতেই হবে, তার আগাম আভাস কি এখনই দিয়ে রাখলেন মমতা? এই সব প্রশ্নই কিন্তু ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক মহলে।