কালীপুজোর রাতেই মন্দির ছেড়ে বেরিয়ে যান মা! পুজোই হয় না এই মন্দিরে

বীরভূমের (Birbhum) গুহ্যকালী মন্দির। 

বিশেষ প্রতিবেদন: কালী মন্দিরে কালীপুজোর (Kali Puja) রাতে বিশেষ ভাবে পুজিতা হন না প্রতিমা। এমন কথা শুনেছেন কখনও? হ্যাঁ, এমনই ঘটে পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের গুহ্যকালী মন্দিরে। শুধু তাই নয়। প্রতি রাতে এবং বিশেষ করে কালী পুজোর রাতে মন্দির চত্ত্বর থাকে সুনসান, ভক্তশূণ্য। এমনকি দেবী নিজেও গর্ভগৃহ থেকে বেরিয়ে আসেন বলে দাবি এলাকার মানুষজনের।তাঁদের কথায় কালী পুজোর রাতে দেবী মেতে ওঠেন নৈশলীলায়। ঘুরে বেড়ান গোটা গ্রাম। কথিত আছে রাতভর শোনা যায় মায়ের নুপুরের শব্দ। স্থানীয়দের দাবি  একসময়ে যেই মন্দিরে নরবলি ও শিশুবলি হতো, সেই মন্দিরের মা জাগ্রত হবেন, এতে আর নতুন কি! 

তন্ত্রসাধনার পিঠস্থান বীরভূম। রামপুরহাট থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার ও নলহাটি থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে ভদ্রপুর গ্রামে অবস্থিত দেবী গুহ্যকালীর মন্দির। ভদ্রপুর রাজবাড়ির মহারাজা নন্দকুমার এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন বলে জানা যায়। প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো এই মন্দিরে নেই কোনও শিবমূর্তি। আশ্চর্যজনকভাবে দেবীমুর্তি জড়িয়ে রয়েছে এক বিশাল সাপ। 

লোকমুখে শোনা যায় সর্পাশ্বীনী এই দেবীর পুজো করতেন মগধরাজ জরাসন্ধ। পরবর্তীতে এই দেবীকে প্রতিষ্ঠা করেন কাশির রাজা চিৎ সিং। তবে ব্রিটিশ গভর্নর ওয়ারেন হেস্টিংস যখন রাজা চিৎ সিং এর প্রাসাদ লুঠ করেন তখন তিনি অনেক সম্পত্তিসহ দেবীর এই মুর্তিটিও লুঠ করেছিলেন বলে জানা যায়। এরপর গঙ্গাবক্ষে কলকাতা যাত্রা করার পথে রাজা নন্দকুমার এই মুর্তিটি উদ্ধার করেন এবং ব্রক্ষ্মণীপুর নদীর ধারে এই দেবী মূর্তি প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্ত নেন। সেই মতো শুরু হয় দেবীর মন্দির নির্মাণের কাজ। 

কিন্তু আচমকা বজ্রপাতের ফলে মন্দিরের কোনগুলি ভেঙে পড়ে। ফলে শেষ হয় না মন্দিরের চূড়া তৈরির কাজ। ইতিমধ্যে রাজা নন্দকুমারকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেন হেস্টিংস এবং রাজার অকাল মৃত্যু ঘটে। পরে পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তণ মৎসমন্ত্রী কিরণ্ময় নন্দ ২০০৪ সালের জানুয়ারী মাসে মন্দিরের নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ করেন।

গুহ্যকালী মূর্তি।

বর্তমানে মন্দিরটি দেখতে অবিকল কোনও পোড়ো বাড়ির মতো। সন্ধের পর মন্দির চত্ত্বরে গেলে গা ছমছম করে। এলাকাবাসী এই দেবীর নাম দিয়েছেন আকালী কালী। এছাড়াও এই দেবীমূর্তি নিয়ে অনেক কথা প্রচলিত রয়েছে। জানা যায় এই মায়ের উদ্দেশ্যে এক শিশুকে পাশের গ্রাম থেকে তুলে এনে নরবলি দেওয়া হয়। এবং শিশুটির মা পরে তাকে খুঁজতে খুঁজতে এই দেবীমূর্তির কাছে গিয়ে প্রার্থনা জানাতেই দেখা যায় পাশের নদী থেকে সুস্থ শরীরে শিশুটি ফিয়ে আসে তার মায়ের কাছে। এরপর থেকে ভক্তরা বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে কোনও মনোস্কামনা নিয়ে আকালী মায়ের পুজো দিলে তা অবশ্যই সফল হয়।  

প্রতিদিন নিত্য পুজো হয় আকালী মায়ের। সন্ধ্যারতির পর মায়ের শয়ন দেওয়া হয়। কথিত আছে গভীর রাতে মা গর্ভগৃহ থেকে বেরিয়ে নৈশলীলা করেন। শুনলে অবাক হবেন কার্তিক মাসের কালিপুজোর অমাবশ্যা তিথিতে সর্বত্র কালীপুজো হলেও আকালী মায়ের বিশেষ কোনও পুজো হয়না এই তিথিতে। কারণ জনশ্রুতি যে কালীপুজোর রাতে মা গর্ভগৃহে থাকেন না। ভক্তসমাগম হলে মায়ের নৈশলীলায় বাধা পড়বে বলে নিত্যপুজো ছাড়া কোনও বিশেষ পুজো করা হয় না এই মন্দিরে। 

তবে দুর্গাপুজোর পর চতুর্দশীর দিন ও পৌষ সংক্রান্তির দিন বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয় আকালী মায়ের মন্দিরে। এই সময়ে ভক্তরা ভিড় করেন মন্দির চত্ত্বরে। ভক্তদের বিশ্বাস মন্দিরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা ব্রাক্ষ্মণী নদীতে স্নান সেরে এই মন্দিরে পুজো দিলে মনের সমস্ত ইচ্ছাপুরণ হয়।