বকেয়ার দাবিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর (Narendra Modi) সঙ্গে বৈঠক মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee)। |
ফলে মমতা যে বৈঠকে আদৌ সন্তুষ্ট নন, তা তাঁর বডি ল্যাঙ্গেয়েজেও স্পষ্ট। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নিয়মমাফিক বৈঠকের সারমর্ম জানালেন। বাকি কোনও প্রশ্নের কার্যত কোনও উত্তর দেননি। সংসদীয় দলের বিষয়ে প্রশ্ন এড়িয়েছেন। মঙ্গলবারের INDIA জোটের বৈঠক নিয়েও কোনও কথা বলেননি, যা তৃণমূল নেত্রীর স্বভাববিরুদ্ধ বলেই মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের।
একশো দিনের কাজ, আবাস যোজনা, গ্রামীণ রাস্তা থেকে স্বাস্থ্য খাতে মিলিয়ে মোট ১৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের পাওনা রয়েছে বলে নবান্নের দাবি। কোন খাতে কত বকেয়া, তার বিস্তারিত খতিয়ানও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মোদীর হাতে তুলে দিয়েছেন বলে সূত্রের খবর।
বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মমতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁদের কথা মনোযোগ সহকারে শুনেছেন। সময় বেঁধে বকেয়া মেটানোর আশ্বাস দিয়েছেন। কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ বৈঠক হবে বলেও মোদী কথা দিয়েছেন বলে দাবি মমতার।
আর এই কেন্দ্র রাজ্য যৌথ বৈঠকের বিষয়টিতেই প্রমাদ গুণছে রাজ্যের শাসক দল। কারণ, কেন্দ্রের তরফে বারবার কখনও ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম নামে, কখনও তদন্তকারী দল নামে পাঠানো হয়েছে বহু কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। তাঁরা কেন্দ্রে গিয়ে রাজ্যে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের কাজ নিয়ে ভাল রিপোর্ট দিয়েছেন, এমন নজির নেই। বরং উল্টে ঢালাও দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন। রাজ্যের বিরোধী দলও শাসক দলের দুর্নীতির অভিযোগে সরব। শুধু তাই নয়, সংসদে দাঁড়িয়ে খোদ শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান, গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতিরা রাজ্যে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকায় ব্যাপক নয়ছয়ের অভিযোগে সুর চড়িয়েছেন।
এই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়েই কার্যত মাস্টারস্ট্রোক মোদীর। যৌথ বৈঠকের কথা বলে কার্যত রাজ্যের একতরফা দাবিকে নস্যাৎ করে দিয়েছেন মোদী। প্রধানমন্ত্রী বুঝিয়ে দিয়েছেন, দাবি জানালেই টাকা পাওয়া যাবে এমন নয়, সব দিক খতিয়ে দেখে, অর্থাৎ দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখে তবেই পাওনা মেটানো হতে পারে। পাশাপাশি সময় বেঁধে রাজ্যের বকেয়া মেটানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও সেই সময় কত দিন, তা যেমন মমতা কোনও দাবি করতে পারেননি, তেমনই কেন্দ্রের তরফেও কিছু বলা হয়নি। এই বৈঠক কবে হবে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। ফলে এক দিকে সময় বেঁধে মেটানোর কথা যদি মোদী বলেও থাকেন, তা যে অদূর ভবিষ্য়তে হবে না, তা বুঝতে পেরেছেন মমতাও। বরং আরও বিলম্বিত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।