প্রাণের পুজো, দানের পুজো

দক্ষিণেশ্বরের বস্তির বাসিন্দাদের খাদ্য সামগ্রী ও জামাকাপড় বিলি চিরসখা ফাউন্ডেশনের সদস্যদের। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন: চারদিকে বৃষ্টির জমা জল। কবে থেকে জমে আছে, বলাটা খুব মুশকিল। কারণ, প্রায় পুরো বর্ষাকালটাই জল জমে থাকে। তার সঙ্গে নোংরা-আবর্জনা মিশে পচে দুর্গন্ধ সর্বক্ষণের সঙ্গী। কিলবিল করছে পোকা, লার্ভা। সাপ, পোকামাকড়ের উপদ্রব উপরি পাওনা। ঢোকার রাস্তা বলতে কিছু নেই। জলের মধ্যে নির্দিষ্ট গ্যাপে ইট বিছানো। কাউকে ভিতরে যেতে হলে ওই ইটের উপর পা ফেলে ফেলে সন্তর্পণে এগোতে হয় ব্যালান্স করে, অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে। একটু অন্যমনস্ক হলেই পা ফস্কে ওই নোংরা জলে।

এমনই এক বস্তিতে ২৪-২৫টি পরিবারের বাস। উন্নয়ন বা বিকাশের আলো কয়েক হাজার আলোকবর্ষ দূরে। কেউ ছেঁড়া-ফাটা রেক্সিনের ব্যানার-পোস্টার জোগাড় করে কোনওরকমে ছাউনি বানিয়েছেন। কেউ বা ভাঙাচোরা টিন দিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই জোগাড় করেছেন।


দক্ষিণেশ্বর মন্দির। হাজারো লাখো ভক্তের পা পড়ে প্রতিদিন। উপচে পড়ে দানবাক্স। কিন্তু তারই অদূরে দক্ষিণেশ্বর স্টেশন সংলগ্ন এই বস্তিতে কার্যত বাইরের কারও পা পড়ে না। তবে পায়ে পায়ে ওই ইট বিছানো তথাকথিত রাস্তা দিয়েই এই প্রান্তিক মানুষগুলোর দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছে চিরসখা ফাউন্ডেশন। প্রায় প্রতিনিয়ত খোঁজ রাখা থেকে বস্তির শিশুদের পড়াশোনা ও সৃজনশীলতার বিকাশের দায়িত্ব নিয়েছে চিরসখা ফাউন্ডেশন। 

বাতাসে পুজো পুজো গন্ধ। কিন্তু ওদের আশপাশের পচা জল, নোংরা-আবর্জনার গন্ধ পেরিয়ে পুজোর মন ভাল করা সুগন্ধ প্রায় পৌঁছয় না বললেই চলে। কিন্তু মনে তো উঁকি দেয় শারদীয়ার আনন্দ। নিজেদের জন্য না হলেও অন্তত ছোট ছোট সন্তানদের জন্য পুজোর সময় নতুন পোশাক, ঠাকুর দেখার ইচ্ছা, এসব পূরণে যথাসাধ্য চেষ্টা করেন। সাধ আর সাধ্যে মিল কোথায়? উৎসবের মরশুমে সেই সাধ পূরণের চেষ্টাই করেছে চিরসখা ফাউন্ডেশন। 

পুজোর মুখে বাঙালি যখন জমিয়ে কেনাকাটা সারছেন, তখন এঁরা ব্যস্ত দু’বেলার খাবার জোগাড় করতে। এই মানুষগুলির পাশে দাঁড়িয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘চিরসখা ফাউন্ডেশন’। সাধ্যমতো জামাকাপড়, চাল-ডাল জোগাড় করে এঁদের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। রাখিবন্ধন উৎসব ও স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে সম্প্রতি বস্তির প্রতিটি ঘরে খাদ্যসামগ্রী ও জামাকাপড় তুলে দিয়েছে এই ট্রাস্ট। ট্রাস্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পুজোর সময় বস্তিতে নতুন পোশাক দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে আর্থিক সঙ্কটও রয়েছে। যদিও সঙ্কটের মধ্যেও পুজোর সময় নতুন পোশাক তুলে দেওয়ার সাধ্যমতো চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন ট্রাস্টের সদস্য ও কর্মকর্তারা। ট্রাস্টকে পাশে পেয়ে যার পরনাই আহ্লাদিত বস্তি পরিবারগুলিও।

চিরসখা ফাউন্ডেশন মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। গরিব, পিছিয়ে পড়া মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে সমব্যাথী হয়ে তাঁদের জীবনযাত্রার মান যাতে সামান্য হলেও উন্নত করা যায়, সেই প্রচেষ্টায় সব সময় ব্রতী। তবে গরিব-অভাবী মানুষজনকে শুধু কিছু সাহায্য করা নয়, চিরসখা ফাউন্ডেশনের মূল প্রচেষ্টা হল, তাঁদের সাবলম্বী করে তোলা বা সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে শেখার দিশা দেখানো। 

চিরসখা ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যুক্ত হতে বা সাহায্য করতে যোগাযোগ করুন
মোবাইল: ৯০৫১৭০৭৪০৭/ ৭৬০৩০৭৩৩০৬