![]() |
| আগরতলায় তৃণমূলের পার্টি অফিস ভাঙচুর। রক্তাক্ত বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু। |
নিজস্ব প্রতিবেদন: রক্তাক্ত খগেন মুর্মু (khagen murmu)। শঙ্কর ঘোষকে (shankar ghosh) মার। তাতে কার্যত স্পিকটি নট। আর আগরতলায় (agartala) তৃণমূলের পার্টি অফিস ভাঙচুর (tmc party office ransacked) হতেই ফুঁসে উঠেছে তৃণমূল। প্রতিশোধের রাজনীতি, গণতন্ত্রের উপর হামলা, আইনশৃঙ্খলা নেই, পুলিশ নিষ্ক্রিয় এমন সব আক্রমণ ধেয়ে আসছে। ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ বলে জবাব দিয়েছে বিজেপিও।
সোমবার আক্রান্ত খগেন মুর্মু, শঙ্কর ঘোষরা। নাগরাকাটায় ত্রাণ দিতে গিয়ে মার খেয়ে নাক ফাটে খগেন মুর্মুর। গাড়ির মধ্যে রক্তাক্ত ভয়ঙ্কর ছবি দেখে শিউরে উঠেছে বাংলার মানুষ। রক্ত না ঝরলেও মার খেয়েছেন শঙ্কর ঘোষও। তাঁকে বাঁশ, লাঠি দিয়ে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। জুতোপেটা করতেও দেখা গিয়েছে। কিন্তু তখন এ রাজ্যের শাসক দলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। দলের নেতারাও খুব একটা গুরুত্ব দেননি। উল্টে এত গাড়ি, কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা নিয়ে যাওয়ায় জনতার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ বলে দাবি করা হয়েছে তৃণমূলের তরফে।
আজ মঙ্গলবার অবশ্য খগেন মুর্মুকে দেখতে শিলিগুড়ির বেসরকারি হাসপাতালে যান মুখ্যমন্ত্রী। যদিও একই হাসপাতালে শঙ্কর ঘোষ ভর্তি থাকলেও তাঁর সঙ্গে দেখা করেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তা নিয়েও বিতর্ক শুরু হয়েছে। ঘটনার নেপথ্যে বিজেপি যতই তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের দিকে অভিযোগ তুলে সরব হোক, শাসক দল সে সব সোজা বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছে।
ত্রিপুরায় তৃণমূলের পার্টি অফিস ভাঙচুর
এই নিয়ে যখন রাজ্য থেকে দিল্লির রাজনীতি তোলপাড়, তার মধ্যেই বিজেপি শাসিত ত্রিপুরায় তৃণমূলের পার্টি অফিসে ভাঙচুর। খগেন, শঙ্করদের আক্রান্ত হওয়ার প্রতিবাদে আগরতলায় ধিক্কার মিছিল করে বিজেপি। সেই মিছিল থেকেই হামলা হয় চিত্তরঞ্জন রোডের মোটর স্ট্যান্ড এলাকায় তৃণমূলের পার্টি অফিসে। পার্টি অফিসের বাইরে ভাঙচুর চালানো হয়। ছিঁড়ে ফেলা হয় সামনে লাগানো গ্লো-সাইনবোর্ড। তৃণমূলের পতাকাও সরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। পুলিশের সামনে ঘটনা ঘটলেও পুলিশকে আটকাতে দেখা যায়নি।
The violent attack on @AITC4Tripura's office by BJP-backed goons is not an isolated act of aggression, it is an open assault on democracy. When those in power unleash violence to silence their opponents, they expose not strength, but fear and moral bankruptcy.
— All India Trinamool Congress (@AITCofficial) October 7, 2025
The BJP talks… pic.twitter.com/VPu78iHr8V
আর এর পর থেকেই তেড়েফুড়ে মাঠে নেমেছে তৃণমূল। পুলিশের সামনেই হামলা হলেও আটকানো হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। কি নিষ্ঠুর পরিহাস দেখুন, এ রাজ্যেও খগেন-শঙ্করের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় বিজেপি ঠিক একই অভিযোগ তুলেছে। তৃণমূল তাতে কর্ণপাতই করেনি। ত্রিপুরার ক্ষেত্রে বিজেপিও একই অবস্থান নিয়েছে।
খগেনে চুপ, ত্রিপুরায় সরব!
আর খগেন মুর্মু, শঙ্কর ঘোষরা আক্রান্ত হওয়ার পর একটি শব্দও শোনা যায়নি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে। সরাসরি তো ছেড়েই দিন, সোশাল মিডিয়াতেও নয়। আর ত্রিপুরায় দলের পার্টি অফিসে হামলা হতেই ঝাঁপিয়ে পড়ে লম্বা এক বার্তা দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তিনি লিখেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে ব্যালট বাক্সে তৃণমূলকে হারাতে না পেরে বিজেপি যে সব রাজ্যে ক্ষমতায় সেখানে অশান্তি ছড়াতে তাদের সব যন্ত্রকে সক্রিয় করেছে। তাদের কার্যকর্তারা আমাদের পার্টি অফিসে হামলা ও ভাঙচুর করেছে। এটা তাদের প্রতিশোধপরায়ণ মানসিকতা ও আইনশৃঙ্খলাহীনতার পরিচয়।’’ ত্রিপুরায় গিয়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি নিজে, সেই ফিরিস্তি তুলে ধরেছেন। ত্রিপুরায় পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিও পাঠানো হচ্ছে বলে এক্স হ্যান্ডল পোস্টে জানিয়েছেন অভিষেক। অথচ খগেন-শঙ্করদের বেলায় একটি শব্দও খরচ করেননি। কোথায় ছিলেন, বা কোথায় থাকেন, কেউ কার্যত তা টেরও পাননি বা পান না। অথচ যেই ত্রিপুরায় পার্টি অফিসে হামলা হয়েছে, অমনি সোশাল মিডিয়ায় হামলে পড়েছেন। অথচ আপনি মঞ্চে, সভা-সমিতিতে এমন দৃঢ়তার সঙ্গে গলার শিরা ফুলিয়ে বক্তব্য রাখেন, যাতে মনে হয়, আপনিই যসততা, ন্যায়বিচারের প্রতিমূর্তি। এমন দ্বিচারিতার রাজনীতি মানুষ কতটা সহ্য করবে, সেটা নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়।
Unable to defeat the Trinamool Congress at the ballot box in Bengal, BJP has unleashed its full machinery to provoke violence in states where they hold power. Their karyakartas ATTACKED and RANSACKED our Party office in Tripura, under the watchful eyes of the Tripura Police,… pic.twitter.com/n1RzgEOEdw
— Abhishek Banerjee (@abhishekaitc) October 7, 2025
ত্রিপুরায় বিজেপি, নাগরাকাটায় জনতা?
একথা ঠিক যে, খগেন-শঙ্করদের আক্রান্ত হওয়া এবং ত্রিপুরায় তৃণমূলের পার্টি অফিস ভাঙচুরের মধ্যে সামান্য মৌলিক পার্থক্য আছে। ত্রিপুরায় হামলা হয়েছে বিজেপির মিছিল থেকে। অর্থাৎ কার্যত স্পষ্ট যে, হামলার নেপথ্যে বিজেপি। অন্য দিকে নাগরাকাটায় খগেন-শঙ্করদের উপর হামলায় সরাসরি তৃণমূলের পতাকা ছিল না। কিন্তু তাতেও তৃণমূল যোগ স্পষ্ট। কারণ হামলাকারীরা দিদির সৈনিক বলে নিজেদের জাহির করেছিল বলে দাবি প্রত্যক্ষদর্শীদের। তা ছাড়া হামলায় যাঁদের ছবি ধরা পড়েছে, তাঁরা তৃণমূল নেতা-কর্মী, এটাও স্পষ্ট। ফলে দলীয় পতাকা না থাকলেও বিজেপির সাংসদ-বিধায়ককে মারধরে যে তৃণমূল জড়িত, তা জলের মতো পরিষ্কার। কিন্তু তৃণমূল তাকে জনরোষ বলে চালাতে উঠেপড়ে লেগেছে। যদিও রাজ্যবাসী নিশ্চয়ই বুঝেছেন যে কারা হামলা করেছে। শাসকের সেই জনরোষের তত্ত্ব কতটা জনতা বিশ্বাস করছে, তা সহজেই বোঝা যায়।
জনরোষ বনাম প্রতিহিংসা
সূতরাং এ রাজ্যে বিজেপি আক্রান্ত হলে ‘জনরোষ’ বলে চালানোর চেষ্টা করবেন, আর ত্রিপুরায় আক্রান্ত হলে রে রে করে তেড়ে যাবেন, তাহলে আপনাদের ছেঁদো কথা মানুষ শুনবে, এমন মুর্খের স্বর্গে বাস করবেন না। কে বলতে পারে, খগেন মুর্মু, শঙ্কর ঘোষরা আক্রান্ত হওয়ার পর এই গুন্ডারা গ্রেফতার হলে এবং আপনারা কঠোর বার্তা দিলে হয়তো ত্রিপুরার ঘটনাই ঘটত না। কিংবা ঘটলেও আপনারাই মানুষের সমর্থন, সহানুভুতি পেতেন। সেটা না করে যা করেছেন, তাতে ব্যুমেরাং হয়ে ফিরে এলে আর কাকে দোষ দেবেন। আজ তৃণমূলের প্রতিনিধি দল যাচ্ছে ত্রিপুরায়। কিন্তু ত্রিপুরার অভিজ্ঞতা তো তৃণমূলের জন্য খুব একটা সুখকর নয়। দেখা যাক।
