তৃণমূলের ঘরে হিরণ! বিজেপি বিধায়কের ঘর ওয়াপসি সময়ের অপেক্ষা?

বিজেপি বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায়ের (Hiran Chatterjee)  সঙ্গে অজিত মাইতির এই ছবিটি ঘিরেই বিতর্ক তুঙ্গে। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া
নিজস্ব প্রতিবেদন
বিজেপির (BJP) তারকা বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায়ের  (Hiran Chatterjee) তৃণমূলে (TMC) যোগদানের জল্পনা আরও তীব্র। তৃণমূল পার্টি অফিসে হিরণ। শুক্রবার সন্ধ্যায় এমনই একটি ছবি ভাইরাল হওয়ার পরই তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। বিজেপি গুরুত্ব না দিলেও থেমে নেই গুঞ্জন। তলে তলে খোঁজ নেওয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে। তার মধ্যেই হিরণের একটি টুইট এবং অজিত মাইতির দাবি ঘিরে আরও তপ্ত হয়েছে জল্পনার বাতাবরণ। 

গত ১০ জানুয়ারি সংবাদমাধ্যমে রটে যায়, বা রটিয়ে দেওয়া হয়, কলকাতায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে গিয়েছিলেন খড়গপুর সদরের বিজেপি বিধায়ক হিরণ। তাঁর সঙ্গে ছিলেন উত্তরবঙ্গের আরও এক প্রভাবশালী বিজেপি বিধায়ক ছিলেন বলেও জল্পনা ছড়ায়। তাতেই রাজনীতির কারবারীরা জল্পনা উস্কে দেন যে, তৃণমূলে ফিরতে চলেছেন বিজেপির এই তারকা বিধায়ক। কিন্তু সেই জল্পনার পক্ষে কোনও প্রমাণ ছিল না। শুধুমাত্র তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ভাবে খবর করছিল বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। তার প্রতিক্রিয়াও দিচ্ছিলেন দুই শিবিরের নেতারা। টিভি, সংবাদপত্রেও এ নিয়ে কাটাছেঁড়া হয়েছে। দুই ফুল শিবিরেও এ নিয়ে চর্চা হয়েছে। 

হিরণ অবশ্য এ নিয়ে সরাসরি মুখ খোলেননি। তবে একটি টুইট করে জল্পনার অবসান ঘটানোর চেষ্টা করেন। তিনি জানান, মধ্যপ্রদেশে দলের একটি কর্মসূচিতে ছিলেন। সেখানে ভাষণ দিয়েছেন। অর্থাত্‍ বোঝাতে চান যে, তিনি কলকাতাতেই নেই। সূতরাং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিসে যাওয়ার প্রশ্নই নেই। পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের দুই বিধায়ক ভিডিও বার্তায় স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তাঁদের নিয়ে জল্পনা ভুয়ো। কেউ এই ধরনের খবর রটালে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেন। 

আরও পড়ুন: নিয়োগ দুর্নীতিতে নোবেলজয়ীদের কী পর্যবেক্ষণ, অমর্ত্য-অভিজিৎকে বিঁধলেন বিচারপতি অভিজিত্‍ গঙ্গোপাধ্যায়

দিন দু’য়েকের কাটাছেঁড়ার পর বিতর্ক কিছুটা স্তিমিত হলেও থেমে যায়নি। তার মধ্যেই শুক্রবার ফের ফিরে এল সেই বিতর্ক। এবার প্রমাণ সহ। সমাজ মাধ্যমে একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। ওই ছবিতে দেখা যাচ্ছে অজিত মাইতির সঙ্গে বসে রয়েছেন হিরণ। পিছনে জ্বলজ্বল করছে জোড়াফুলের ছবি। অর্থাত্‍ এটা যে তৃণমূলেরই পার্টি অফিস, তা বুঝতে আর কারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। 

এই জল্পনা সামনে আসতেই অজিত মাইতির দাবি, শুধু হিরণ একা নন, বাংলার অনেক নেতাই বিরক্ত। কেন্দ্র যেভাবে রাজ্যেক শোষণ করছে এবং রাজ্য বিজেপি যেভাবে এজেন্সির মাধ্যমে তৃণমূলকে অপদস্থ করার চেষ্টা করছে, তাতে অনেক বিধায়ক, সাংসদ, নেতা-মন্ত্রী বিরক্ত। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলে কো-অর্ডিনেটরের এই বক্তব্য হিরণের ঘর ওয়াপসির জল্পনায় আরও ইন্ধন দিয়েছে। 

আরও পড়ুন: ‘বেলাইন’ বন্দে ভারত, ফের মমতার সামনে জয় শ্রীরাম! মুখ পুড়ল কার?

বিজেপি অবশ্য পাত্তা দিতে চায়নি। শুক্রবারই দলের সাংগঠনিক বৈঠক ছিল দুর্গাপুরে। ওই বৈঠকে ছিলেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার-সহ বঙ্গ বিজেপির নেতারা। কিন্তু সেখানে হিরণ ছিলেন না। প্রশ্ন করতেই বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ওই ছবি পুরনো। ছবি নিয়ে আমাদের কোনও আগ্রহ নেই। হিরণ শনিবার দুবাইয়ে যাচ্ছেন বলেই দুর্গাপুরের বৈঠকে যোগ দেননি।’’
এর মধ্যে জল্পনা আরও জোরদার হয়েছে হিরণের নতুন একটি টুইটে। ছবি ভাইরাল হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই কাঁথির জনসভার একটি ভিডিও টুইট করেন হিরণ। লেখেন,  ‘‘এটি একটি পুরনো ভিডিও। আজকে পোস্ট করলাম।’’

কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়। এই ভিডিওতে অর্থাত্‍ কাঁথির জনসভার ভিডিওতে যে পোশাকে দেখা যাচ্ছে হিরণকে, ভাইরাল ছবিতেও হুবহু এক পোশাক। সাদা শার্ট পরা। কালোর উপর হলুদ স্কোয়ার দেওয়া হাফহাতা কোট চাপিয়েছেন ওই শার্টের উপরে। বুক পকেটের উপরে ভাঁজ করা ডিজাইনও এক। এমনকি, দুই ছবিতেই কপালে তিলক। 

ফলে বিজেপি যে ভাইরাল এই ছবি পুরনো বলে দাবি করছে, সেই দাবি কার্যত খারিজ হচ্ছে এই একই পোশাকে। আবার ১০ জানুয়ারি পূর্ব মেদিনীপুরে কর্মসূচি ছিল হিরণের। ফলে ১০ জানুয়ারি একই পোষাকে তৃণমূলের পার্টি অফিসে এবং পূর্ব মেদিনীপুরের কর্মসূচিতে থাকায় প্রশ্ন উঠছে, তবে কি ওই দিন সত্যিই অভিষেকের কার্যালয়ে গিয়েছিলেন হিরণ। পোশাক এক থাকায় সম্ভাবনা আরও জোরালো হয়েছে। 

আবার হিরণই বা কেন হঠাত্‍ আগের ভিডিও শোশ্য়াল মিডিয়ায় পোস্ট করলেন, তারও কোনও সদুত্তর মেলেনি। দুই ছবি যে একই পোশাকে, সেটা কি তিনি খেয়াল করেননি? নাকি জেনে বুঝেই দিয়েছেন? এমন বহু প্রশ্ন ভাসছে। উত্তরের অপেক্ষায় বাংলার আম জনতা।