খাড়গে প্রধানমন্ত্রী মুখ! মমতার প্রস্তাবে তাল কাটল INDIA-র

মল্লিকার্জুন খাড়গেকে (Mallikarjun Kharge) প্রধানমন্ত্রী মুখ করার প্রস্তাব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee)।  
নিজস্ব প্রতিবেদন, নয়াদিল্লি: পটনা, বেঙ্গালুরু, মুম্বই। এবার দিল্লিতে I.N.D.I.A. জোটের বৈঠক। চতুর্থ বৈঠকেই কি তাল কাটল? বৈঠকের পর মল্লিকার্জুন খাড়গের সাংবাদিক বৈঠক থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, অখিলেশ যাদবদের আলাদা ভাবে বৈঠক ছেড়ে যাওয়ার ছবি দেখে অন্তত তেমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। ফাটল না ধরলেও অন্তত মতৈক্য যে হয়নি, তার ইঙ্গিত মিলেছে নেতাদের বক্তব্যে। 

কী ছবি দেখা গেল? প্রায় আড়াই ঘণ্টার আলোচনা। সাংবাদিক বৈঠকের আগেই বৈঠক ছেড়ে গাড়িতে উঠে কাচের জানালা তুলে সটান বেরিয়ে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়য়। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হতে যিনি সবচেয়ে বেশি স্বচ্ছন্দ, কার্যত মুখিয়ে থাকেন, তিনিই স্পিকটি নট। একটি কথাও বললেন না। একে একে বেরিয়ে গেলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল, অখিলেশ যাদবরা। অখিলেশ বললেন, আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। শীঘ্রই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কেজরিওয়াল শুধু বললেন, সদর্থক আলোচনা হয়েছে। 

এর পর সাংবাদিক বৈঠকে এলেন মল্লিকার্জুন খাড়গে। ছোট বক্তৃতায় একটিই তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্য, আসন সমঝোতার বিষয়ে আঞ্চলিক নেতারা আলোচনা করবেন। অর্থাৎ রাজ্যে রাজ্যে যে যেখানে শক্তিশালী, তাঁরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। তাতেও জট না কাটলে তখন জোটের নেতারা হস্তক্ষেপ করবেন। 

এর মধ্য়েই বৈঠক সূত্রে খবর মেলে, মল্লিকার্জুন খাড়গেকে প্রধানমন্ত্রী মুখ করে লড়াইয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতে সমর্থন করেছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল, অখিলেশ যাদব। পাশাপাশি তাঁকে I.N.D.I.A. জোটের কো-অর্ডিনেটর করার প্রস্তাবও দেওয়া হয়। কিন্তু এতেই নাকি বেজায় চটে যান লালুপ্রসাদ যাদব এবং নীতীশ কুমার। সূত্রের খবর, এর পর আর কার্যত আলোচনা এগোয়নি। সাংবাদিক বৈঠকে খাড়গে নিজেই বলেন, কে প্রধানমন্ত্রী হবে, সে সব বিষয় পরে। আগে সরকার গঠন করার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্য়া দরকার। তার জন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সংখ্যা না থাকলে প্রধানমন্ত্রী মুখ নিয়ে ভাবনা অর্থহীন। অর্থাৎ কার্যত মমতার প্রস্তাবকে নস্যাৎই করে দিয়েছেন খাড়গে। 

আর গুরুত্বপূর্ণ দুটি প্রস্তাবনা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন খাড়গে। প্রথমত, সংসদে তিন দিনে ১৪১ সাংসদের সাসপেনশনের প্রতিবাদে ২২ ডিসেম্বর দেশ জুড়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করবে জোটের শরিক দলগুলি। দ্বিতীয়ত, ইভিএম নিয়ে নানা অভিযোগ। ফলে ব্যালট পেপার চালুর দাবি জানানো হবে নির্বাচন কমিশনে। ব্যালট না হলে ইভিএম এবং ব্যালটের হাইব্রিড মডেল চালু করার প্রস্তাব। সেটাও না হলে অন্তত ইভিএমের যে ভিভিপ্যাট স্লিপ পাওয়া যায়, তা অন্তত ভোটারদের হাতে দেওয়া হোক, যাতে সেটা তাঁরা দেখে বাক্সে ফেলতে পারেন। কিন্তু জোটের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত কার্যত গুরুত্বহীন। এমনকি, আসন সমঝোতার বিষয়ে আলোচনা কতটা এগিয়েছে, তা নিয়েও সন্দিহান রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ। 

এর মধ্যেই আরও একটি চাল দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দ্রুত আসন সমঝোতার কথা বলেছেন তৃণমূল নেত্রী। এমনকি ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এই আসন রফার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করে ফেলার কথাও বলে ডেডলাইন বেঁধে দিয়েছেন তিনি। কিন্তু সেটাও যে এত দ্রুত সম্ভব নয়, তা এখনও বলে দিচ্ছেন অনেকে।

কিন্তু প্রথম তিন বৈঠকে যে ঐক্যের সুর বাজছিল, তার ছন্দ অনেকটাই কেটেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। অনেকে এও বলছেন, এই ঐক্য আর এই শক্তি নিয়ে মোদী-শাহের অশ্বমেধের ঘোড়া থামাতে নামলে মুখ পুড়বে। রাজ্যে রাজ্যে জোট আদৌ কতটা দানা বাঁধবে, বা চাপিয়ে দিলেও তা কতটা আন্তরিক হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। এই ছন্নছাড়া চেহারা নিয়ে চব্বিশের ভোটে মোদী বনাম মল্লিকার্জুন খাড়গে লড়াই? নাক কাটা না যায়!