ISF এর বিক্ষোভে ধর্মতলায় ধুন্ধুমার, লাঠি-গ্যাসে অগ্নিগর্ভ | গ্রেফতার নওশাদ

জ্বলছে ধর্মতলা (Dharmatala)। আইএসএফ (ISF) এর মিছিলে ধুন্ধুমার। - নিজস্ব চিত্র 

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা ও ভাঙড়:  ভাঙড়ে অশান্তির ঢেউ আছড়ে পড়ল কলকাতায়। মহানগরের প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলায় (Dharmatala) দাপট দেখাল নওশাদ সিদ্দিকির (Nawsad Siddique) নেতৃত্বে আইএসএফ (ISF)। সংগঠনের সভা ঘিরে পুলিসের, লাঠি, কাঁদানে গ্যাস, ভাঙচুরে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হল শনিবারের বিকেলে। আহত বহু আইএসএফ কর্মী। নওশাদ-সহ ১৯ আইএসএফ কর্মী গ্রেফতার। তাঁদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করেছে কলকাতা পুলিস। 

ধর্মতলায় এই ধুন্ধুমার পরিস্থিতির সূত্রপাত অবশ্য সকালেই হয়েছিল ভাঙড় থেকে। কলকাতার সভায় ছোট গাড়ি, বাসে করে আসছিলেন ধর্মতলার পথে। তৃণমূল সমর্থকরা তাদের বাধা দেয় বলে অভিযোগ। গাড়ি লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়া, বাঁশ দিয়ে গাড়িতে হামলা-সহ নানা অভিযোগ তোলে আইএসএফ। তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ, আইএসএফ কর্মীরাই হামলা চালায়। এই নিয়ে শুরু হয় সংঘর্ষ। বোমাবাজি শুরু হয় বিভিন্ন জায়গায়। তৃণমূলের পার্টি অফিসে ভাঙচুর, আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। প্রতিবাদে ভাঙড়ের তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামের নেতৃত্বে রাস্তা অবরোধ করে বসে পড়েন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা। নওশাদের অভিযোগ, তাঁর দলীয় কর্মীদের ধর্মতলায় যাওয়া আটকাতেই পরিকল্পিত হামলা চালিয়েছে তৃণমূল। আরাবুলের পাল্টা দাবি, নওশাদই নির্দেশ দিয়েছে জ্বালিয়ে দাও, পুড়িয়ে দাও। তাঁর নির্দেশেই তৃণমূল কর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন। নওশাদকে গ্রেফতার না করা পর্যন্ত তাঁরা অবরোধ চালিয়ে যাবেন। 

আরও পড়ুন: ফের অস্বস্তি বাড়ল শাসকের, নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেফতার যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ

এই পরিস্থিতিতেই ধর্মতলার সভায় যোগ দেন নওশাদ। প্রচুর আইএসএফ সমর্থকও জড়ো হন। সেখান থেকেই নওশাদ হুঙ্কার ছাড়েন, তাঁদের সভায় আসতে যারা বাধা দিয়েছে, তাদের গ্রেফতার না করলে কলকাতার পুলিস বুঝতে পারবে, আইএসএফ কী জিনিস। ভাঙড়ের হামলায় এমনিতেই ক্ষুব্ধ ছিলেন আইএসএফ কর্মীরা। নওশাদের এই বক্তব্যে আরও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আইএসএফ কর্মীরা পুলিসকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছুড়তে শুরু করেন বলে অভিযোগ। পুলিস বুথে ভাঙচুর করা হয়। একাধিক গাড়িতে ভাঙচুর করা হয় এবং আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। 

এর পরই পুলিস বেধড়ক লাঠিচার্জ শুরু করে। কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় গোটা ধর্মতলা চত্বর। মুহুর্মুহু কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিস। সঙ্গে চলতে থাকে লাঠিপেটা। ছত্রভঙ্গ হয়ে যান আইএসএফ কর্মীরা। এক সময় আইএসএফ বিধায়ক নওশাদকে চ্যাংদোলা করে পুলিস ভ্যানে তোলেন পুলিসকর্মীরা। ঘটনাস্থল থেকেই অনেককে গ্রেফতার করা হয়। অনেককে রাস্তার উপর পড়ে থাকতে দেখা যায়। আর ছত্রভঙ্গ হওয়ার পর সভাস্থলে প্রচুর জুতো, চটি, জামাকাপড় পড়ে থাকতে দেখা যায়। প্রায় আধঘণ্টা এই ধুন্ধুমার অবস্থার পর কিছুটা শান্ত হয় পরিস্থিতি। 

আরও পড়ুন: তৃণমূলের ঘরে হিরণ! বিজেপির তারকা বিধায়কের ঘর ওয়াপসি কি সময়ের অপেক্ষা?

পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন পুলিস কমিশনার বিনীত গোয়েল। তাঁর দাবি, আইএসএফ কর্মীরাই প্রথমে হামলা চালায়। পুলিস লাঠিচার্জ করে। অনেক পুলিসকর্মী আহত হন। পরে লালবাজার জানায় কর্মী অফিসার মিলয়ে পুলিসের আহতের সংখ্যা ১৯। aaaaaaaaaaaaaa

এই ঘটনা ঘিরে রাজনৈতিক চাপানউতোরও চরমে উঠেছে। বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, তৃণমূল সরকার চায় না এই রাজ্যে কোনও বিরোধী দল থাকুক। তাদের স্বৈরাচারী, আগ্রাসী মনোভাবের জন্যই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। পাল্টা শাসক দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের বক্তব্য, একটি সংগঠনের আড়ালে আসলে অশান্তি করছে বাম-বিজেপি। গন্ডগোল করলে পুলিস-প্রশাসন ব্যবস্থা নেবেই।ধর্মতলায় যখন এই তুলকালাম কাণ্ড চলছে, তখনও ভাঙড়ে অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছিলেন আরাবুলরা। তবে সন্ধের দিকে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে সেই অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। রবিবার ভাঙড়ে প্রতিবাদ সভার ডাক দেওয়া হয়। কিন্তু রাতের দিকে আবার শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে সেই কর্মসূচিও বাতিল করা হয়েছে।