হাসপাতালে অনীহা, তবু দু’বছর পর হাসপাতালে ভর্তি বুদ্ধবাবু

হাসপাতালে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য (Buddhadeb Bhattacharjee)। (ছবি সৌজন্য: আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন)
নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা: ফুসফুস এবং শ্বাসনালী। জোড়া সংক্রমণ। ফলে হাসপাতালে যেতে যাঁর বরাবরের অনীহা, সেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে দু’বছর পর ফের হাসপাতালে ভর্তি হতে হল। আলিপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভেন্টিলেশনে রয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, অত্যন্ত সঙ্কটকজনক বুদ্ধবাবু। শনিবার রাত এবং তার পরের দু’দিন চিকিৎসকদের সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ। 

নিউমোনিয়ার জন্যই সংক্রমণ বেড়েছে বুদ্ধবাবুর। বুধবার থেকে সংক্রমণের পর বাড়িতেই চিকিৎসা চলছিল। স্যালাইনের মাধ্যমে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু শনিবার দুপুরের খাবারের পর থেকে তাঁর শ্বাসকষ্ট বাড়ে। অক্সিজেন স্যাচুরেশন লেভেল ৯০ শতাংশের নীচে নেমে যাওয়ায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তির সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। 

গ্রিন করিডোরে হাসপাতালে 

এই সিদ্ধান্ত হওয়ার পরই দক্ষিণ কলকাতার ওই হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুল্যান্স আসে বুদ্ধবাবুর পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে। গ্রিন করিডোর করে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। তাঁর অক্সিজেন স্যাচুরেশন লেভেল ৭০ শতাংশেরও নীচে নেমে যায়। তবে অক্সিজেন দিয়ে স্যাচুরেশন স্থিতিশীল হয়। অক্সিজেন লেভেল পৌঁছয় ৯৩ শতাংশের কাছাকাছি। কিন্তু দেখা দেয় অন্যান্য সমস্যা। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরও কথা বলছিলেন। কিন্তু ধীরে ধীরে তিনি অচৈতন্য হয়ে পড়েন। তার পর আর ঝুঁকি নিতে চাননি চিকিৎসকরা। প্রথমে বাইপ্যাপ ভেন্টিলেশন এবং পরে সেখান থেকে ফুল ভেন্টিলেশনে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। চলছে একাধিক অ্যান্টিবায়োটিক। 

৪৮ ঘণ্টা চ্যালেঞ্জ চিকিৎসকদের

বুদ্ধবাবুর শ্বাসকষ্টের সমস্যা দীর্ঘদিনের। অর্থাৎ ধারাবাহিক সিওপিডি-র সমস্যা রয়েছে। তাঁর পারিবারিক চিকিৎসক কৌশিক চক্রবর্তী জানিয়েছেন, পরিস্থিতি অত্যন্ত সঙ্কটজনক। যে অ্যান্টিবায়োটিকগুলি চলছে, সেগুলি কাজ করছে কিনা তা বুঝতে আরও অন্তত ৪৮ ঘণ্টা সময় লাগবে। ফলে সেই ৪৮ ঘণ্টা না কাটা পর্যন্ত নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না চিকিৎসকরা। যদিও গভীর রাতে হাসপাতাল ছাড়ার সময় বুদ্ধবাবুর চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘ভাল সাইন দেখেছি বলেই হাসপাতাল ছাড়ছি।’’

বেড়েছে সিওপিডির সমস্যা 

দু’বছর আগে যখন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বুদ্ধবাবু, তখন অবস্থা এতটা সঙ্কটজনক ছিল না। ফলে দু’দিন পর বাড়ি ফিরেছিলেন। এই দু’বছরের মধ্যে কোভিড হয়েছে। ফলে ফুসফুসের জোর অনেকটাই কমেছে। তার সঙ্গে বয়স বেড়েছে। সিওপিডি-র সমস্যাও খানিকটা বেড়েছে বুদ্ধবাবুর। সেই কারণেই এবারের অসুস্থতা আগের বারের চেয়ে গুরতর বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। এবার সংক্রমণের মাত্রা ৩৭০-এর বেশি। ফলে আগের বারের চেয়ে এবার বেশি দিন হাসপাতালে ভর্ত থাকতে হতে পারে বুদ্ধবাবুকে। 

এবার আর আপত্তি নয়!

হাসপাতালে যেতে বরাবরই অনীহা বর্ষীয়ান সিপিএম নেতা তথা রাজ্যের শেষ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধবাবুর। দু’বছর আগে যখন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, তখন কার্যত তাঁর আপত্তি উপেক্ষা করেই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে পারিবারিক সূত্রে খবর, এবার আর হাসপাতালে ভর্তি হতে আপত্তি করেননি বুদ্ধবাবু। ফলে বোঝাই যাচ্ছে কতটা অসুস্থ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। 

দেখে গেলেন রাজ্যপাল 

শনিবার ভর্তির পরে পরেই তাঁক হাসপাতালে দেখতে যান রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। বুদ্ধবাবুর স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য এবং একমাত্র সন্তান সুচেতনের সঙ্গেও কথা বলে আশ্বস্ত করেন। পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, বুদ্ধবাবু অত্যন্ত দক্ষ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন। বিকেলে হাসপাতালে ভর্তির পর থেকেই রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরাও ভিড় জমান। সিপিএম নেতা রবীন দেব, সূর্যকান্ত মিশ্ররা ছিলেনই। হাসপাতালে যান বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য। টুইটে সুস্থতা কামনা করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।