ফিল্মি কায়দায় শুটআউট যোগীরাজ্যে! ক্যামেরার সামনেই ঝাঁঝরা গ্যাংস্টার আতিক ও তার ভাই

প্রয়াগরাজে গুলিতে ঝাঁঝরা আতিক গ্যাংস্টার রাজনীতিবিদ আহমেদ (Gangster turned politician Atiq Ahmed) ও তার ভাই আশরাফ (Ashraf Ahmed)। অলঙ্করণ: সুবর্ণরেখা টিম

সংবাদ সংস্থা, প্রয়াগরাজ ও লখনউ: পুলিসের চোখের সামনে খুন হয়ে গেলেন গ্যাংস্টার রাজনীতিক আতিক আহমেদ (Gangster Turnded Politician Atiq Ahmed) ও তার ভাই আশরাফ (Ashraf Ahmed)। শনিবার রাতে প্রয়াগরাজে (Prayagraj) হাড় হিম করা ভিডিয়ো দেখে শিউরে উঠেছে গোটা দেশ। ফিল্মি কায়দায় পুলিস, সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেল দুই ভাইয়ের দেহ। খুনের পর আত্মসমর্পণ করল তিন আততায়ী। 

ভয়ঙ্কর। ভয়াবহ। হাড় হিম করা হত্যাকাণ্ড। কোনও বিশেষণেই ঠিক বোঝানো যাচ্ছে না ঘটনার বীভৎসতা। বলিউডি ফিল্মেও এমন চিত্রনাট্য কেউ লেখার সাহস দেখাতে পেরেছেন কিনা মনে করা যাচ্ছে না। এমন ভয়ঙ্কর ঘটনায় যোগীরাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। 

গ্যাংস্টার আতিক ও আশরাফকে প্রয়াগরাজ হাসপাতালে মেডিকেল করাতে নিয়ে যায় পুলিস। গাড়ি থেকে নামিয়ে হাসপাতালের ভিতরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। দুই ভাইয়ের হাতে শিকল পরানো ছিল। দু’পাশে দু’জনের হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছিলেন দুই পুলিস অফিসার। হাসপাতালে ঢোকার মুখে সংবাদ মাধ্য়মের ক্যামেরার সামনে হাঁটতে হাঁটতেই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন আতিক। 

সেই সময় আচমকাই পিছন থেকে হামলা। মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে পর পর গুলি আতিককে। আতিক পড়ে যেতেই তার ভাইকেও নির্বিচারে গুলি চালায় আততায়ীরা। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মৃত্যু নিশ্চিত হতেই আত্মসমর্পণ করে তিন আততায়ী। পুলিস তিন জনকেই ধরে ফেলে। ধৃত তিন জনের নাম সানি, লভলেশ এবং অরুণ। উদ্ধার হয়েছে আগ্নেয়াস্ত্রও। 

সাংবাদিকের বেশে অপারেশন!

প্রাথমিক তদন্তে পুলিসের অনুমান, সাংবাদিক সেজে ঘটনাস্থলে এসেছিল আততায়ীরা। এক জনের পিঠে ব্যাগ এবং হাতে ক্যামেরাও ছিল। পুলিস মনে করছে, পেশাদার খুনি ছাড়া এমন হত্যাকাণ্ড ঘটানো সম্ভব নয়। আগে থেকে দুষ্কৃতীরা রেইকি করে গিয়েছিল বলেও মনে করছেন তদন্তকারী পুলিস অফিসাররা। হত্যাকাণ্ডের পরই এলাকা ঘিরে ফেলে পুলিস। গোটা এলাকায় ভিড় জমে যায়। রাতেই ঘটনাস্থলে যান প্রয়াগরাজের পুলিস কমিশনার। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরাও ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছেন।  

ছেলের শেষকৃত্যের দিনই খুন বাবা

ঘটনাচক্রে শনিবারই শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে গ্যাংস্টার আতিক আহমেদের তৃতীয় ছেলে আসাদের। উমেশ পাল হত্যাকাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত আসাদ। তার সঙ্গী ছিল গুলাম। উত্তরপ্রদেশ পুলিসের এনকাউন্টারে খুন হয় আসাদ ও গুলাম। ছেলের শেষকৃত্যে হাজির থাকার জন্য আবেদনও করেছিলেন আতিক। কিন্তু  শুক্রবার আম্বেদকর জয়ন্তীর ছুটি থাকায় সেই আবেদন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জমা দিতে পারেননি আতিকের আইনজীবী। তাই শেষকৃত্যে যোগ দিতেও পারেননি। 

সব জেলায় ১৪৪ ধারা 

ঘটনার পরই রাজ্যের পুলিস প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। অশান্তির আশঙ্কায় সব জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। যে কোনও ধরনের জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অশান্তির আঁচ মিলেছে রাতেই। প্রয়াগরাজ, লখনউ-সহ একাধিক জায়গায় জমায়েত হয়। মিছিলও বেরোয়। তার জেরেই এমন সিদ্ধান্ত যোগীর। 

প্রয়াগরাজে উমেশ পাল হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত ছিল আতিক। উমেশ পাল আবার ছিলেন ছিলেন বিএসপি বিধায়ক রাজু পাল হত্যাকাণ্ডের মূল সাক্ষী। ২০০৫ সালে এলাহাবাদ পশ্চিম কেন্দ্রে বিধায়ক পদে বিএসপির টিকিটে জেতার পরপরই খুন হন রাজু পাল।