![]() |
কলকাতার জোকা IIM-এর বয়েজ হস্টেলে মহিলাকে ধর্ষণের অভিযোগ (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি প্রতীকী ছবি)। |
কসবার সাউথ ক্যালকাটা ল’ কলেজের পর এবার আইআইএম জোকা। ফের কলকাতায় ক্যাম্পাসে ধর্ষণের অভিযোগ। এবার এক মনোবিকে কাউন্সেলিং করানোর নামে ডেকে নিয়ে গিয়ে আইআইএম জোকার বয়েজ হস্টেলের রুমে ধর্ষণের অভিযোগ উঠল দেশের নামী ম্যানেজমেন্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দ্বিতীয় বর্ষের এক পড়ুয়ার বিরুদ্ধে। ঘটনায় দেশ জুড়ে শোরগোল।
কসবার ল’ কলেজে গণধর্ষণের অভিযোগ ঘিরে তোলপাড়ের মধ্যেই আবার কলকাতার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চৌহদ্দিতে ধর্ষণের অভিযোগ। শুক্রবার এই ঘটনার পর রাতেই থানায় লিখিত অভিযোগ জানান তরুণী। অভিযোগের ভিত্তিতে হস্টেলে গিয়ে অভিযুক্ত পড়ুয়াকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে অভিযুক্তের মোবাইল। তাঁকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আলিপুর আদালত।
অন্য দিকে ঘটনায় নাটকীয় মোড় এনে দিয়েছেন অভিযোগকারিণী তরুণীর বাবা। তাঁর বক্তব্য, তাঁর মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়নি। জোর করে ওই অভিযোগ লিখিয়ে নেওয়া হয়েছে। আর এর পরই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠায় রাজ্যের শাসক দল বিজেপিকে আক্রমণ শুরু করে। বিজেপির পাল্টা অভিযোগ, কসবা কাণ্ড থেকে নজর ঘোরাতেই এই অভিযোগ তোলা হচ্ছে।
ঠিক কী ঘটেছিল?
পুলিশ সূত্রে খবর, ’নির্যাতিতা’ মনোবিদ তরুণী পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, শুক্রবার বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে তিনি অভিযুক্তের কাউন্সেলিং করাতে আইআইএম জোকায় গিয়েছিলেন। অভিযুক্ত তাঁকে বয়েজ হস্টেলের ভিতর নিয়ে যান। হস্টেলের নিয়ম অনুযায়ী, ভিতরে যেতে হলে ভিজিটর্স রেজিস্টারে নাম, ঠিকানা নথিভুক্ত করতে হয়। লিখতে হয় কারণ। তরুণীর বয়ান অনুযায়ী, ভিজিটর্স রেজিস্টারে তাঁকে নাম-ঠিকানা নথিবদ্ধ করতে দেওয়া হয়নি। এর পর ঘরে নিয়ে যাওয়ার পর তরুণীকে পিৎজা এবং জল খেতে দেওয়া হয়। খাবারে কিছু মেশানো ছিল বলে অভিযোগ। ‘নির্যাতিতা’ জানান, ওই খাবার খাওয়ার পরেই তিনি আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। বমি পেলেও তাঁকে শৌচাগারে যেতে দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ তরুণীর। তরুণীর বয়ানে দাবি, অভিযুক্তের ব্যাখ্যা ছিল, বয়েজ হস্টেলে এক জন মেয়ে এসেছে, এটা তাঁর বন্ধুরা জেনে যেতে পারেন।
‘নির্যাতিতা’র লিখিত বয়ান অনুযায়ী, দু’জনের কথাবার্তা চলার সময়ে হঠাৎই অভিযুক্ত তাঁর চুল টেনে ধরেন। আত্মরক্ষায় চড় মারেন তরুণী। তার পরেই অভিযুক্ত তাঁর মাথা ঠুকে দেন। সংজ্ঞা হারান ‘নির্যাতিতা’। লিখিত বয়ানে ‘নির্যাতিতা’ জানিয়েছেন, আচ্ছন্ন বা অর্ধচেতন অবস্থায় তিনি বুঝতে পারেন, তাঁকে ধর্ষণ করা হচ্ছে। অনেক পরে জ্ঞান ফিরলে তরুণী দেখেন যে, তিনি বয়েজ হস্টেলে রয়েছেন। এর পর রাত আটটার পর সেখান থেকে বেরিয়ে হরিদেবপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।
তরুণীর বাবার কী বক্তব্য?
এর পর দুপুরের দিকেই ঘটনায় নাটকীয় মোড়। অভিযোগকারী তরুণীর বাবার বক্তব্য, তাঁর মেয়ের সঙ্গে ধর্ষণের কোনও ঘটনা ঘটেনি। গাড়ি থেকে পড়ে আহত হন। রাতে সংজ্ঞা ফিরলে তিনি প্রথমে বুঝতে পারেননি, কোথায় আছেন। পরে জানতে পারেন এসএসকেএম এ আছেন। তখন বাড়িতে ফোন করেন। তাঁর অভিযোগে তাহলে অন্য কথা, অর্থাৎ ধর্ষণের অভিযোগ কেন? এ ক্ষেত্রে অভিযোগকারিণীর বাবার দাবি, তাঁর মেয়েকে দিয়ে জোর করে লিখিয়ে নেওয়া হয়েছে ওই বয়ান। কে বা কারা লিখিয়েছে? এ প্রশ্নের উত্তরে ‘নির্যাতিতা’র বাবার দাবি, কারা লিখিয়েছে, সেটা তিনি জানতে পারেননি। মেয়ে সুস্থ হলে জানতে পারবেন।
তুঙ্গে রাজনৈতিক তরজা
কসবা কাণ্ড নিয়ে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। তার মধ্য়ে অভয়াকাণ্ডের বর্ষপূর্তিতে রাত দখলের ডাক দেওয়া হয়েছে। তা নিয়ে পারদ চড়ছে। তার মধ্যেই এই ধর্ষণের অভিযোগ এবং তাঁর বাবার বয়ান ঘিরে শুরু হয় রাজনৈতিক তরজা। বিজেপি নেতা শঙ্কুদেব পণ্ডা বলেন, এই ঘটনার সঙ্গে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য় থাকতে পারে। কসবার ঘটনার মোকাবিলা করতে পারছে না রাজ্য। তাই মোকাবিলার জন্য রাজনৈতিক পরিকল্পনা করেছে। পাল্টা তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের বক্তব্য, মেয়েটি বলছে ধর্ষণ হয়েছে। মেয়েটির বাবা বলছেন, ধর্ষণ হয়নি। এর মধ্যে তৃণমূল আসছে কেন?